,

ফাঁদে ফেলে গণধর্ষণ: সেই গৃহবধূ নিখোঁজ

কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে এক প্রবাসীর স্ত্রীকে ফাঁদে ফেলে গণধর্ষণ এবং তার নগ্ন ভিডিওচিত্র মোবাইল ফোনে ধারণ করে ভয় দেখিয়ে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় তিন যুবকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই নারী গত ২ জুলাই কিশোরগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এ মামলা দায়ের করেছেন।

মামলায় কটিয়াদী উপজেলার আচমিতা গ্রামের মোস্তফা কামালের ছেলে রেজা শাহ পিংকি, মতিউর রহমানের ছেলে মাসুম ও জব্বারের ছেলে বাবুলকে আসামি করা হয়। মামলার পর গত শনিবার থেকে ওই গৃহবধূ নিখোঁজ রয়েছেন। রোববার রাত পর্যন্ত তার সন্ধান মেলেনি। মামলার সাক্ষী জুয়েল পাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, ওই তিন যুবক ভিডিওচিত্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই নারীর কাছে তার স্বামীর গচ্ছিত ২৫ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেয়। চাহিদা মতো আরও টাকা দিতে না পারায় তারা শেষ পর্যন্ত ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে দেয়। এ ঘটনায় স্বামী ও বাবার বাড়ি থেকে বিতাড়িত গৃহবধূ অবশেষে আদালতের আশ্রয় নেন। বর্বরোচিত এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন মহিলা পরিষদ ও হিন্দু কমিউনিটি নেতারা।

আদালতে করা অভিযোগ থেকে জানা গেছে, আচমিতা গ্রামের ওই গৃহবধূর স্বামী প্রায় ১২ বছর ধরে বিদেশে রয়েছেন। তাদের সংসারে দুই সন্তান রয়েছে। গৃহবধূ ব্যক্তিগত ও পারিবারিক প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে আচমিতা বাজারের একটি ফ্লেক্সিলোড ও বিকাশ এজেন্টের দোকানে যেতেন। এ সম্পর্কের সূত্র ধরে দোকানি রেজা শাহ পিংকি তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা ধার নেয়। গত ২৪ মার্চ বিকেলে এ টাকা পরিশোধের কথা বলে গৃহবধূকে কৌশলে দোকানে ডেকে নেয় রেজা। এরপর হঠাৎ দোকানের দরজা-জানালা বন্ধ করে দিয়ে দুই সহযোগী মাসুম ও বাবুলকে নিয়ে ধর্ষণ এবং নগ্ন ভিডিও ধারণ করে। লোকলজ্জা ও ভয়ে এ ঘটনা আড়াল করে রাখেন ওই নারী। এর ক’দিন পর থেকেই ওই ধর্ষক দল ধারণকৃত নগ্ন ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করতে থাকে। প্রবাসী স্বামীর গচ্ছিত ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে সর্বস্বান্ত করে। পরে তারা আরও টাকা চাইলে তিনি দিতে না পারায় নগ্নভিডিও চিত্র ছড়িয়ে দেয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব ভিডিওচিত্র দেখে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এরপর ওই গৃহবধূ বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিতে গেলে সেখান থেকেও তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

ভিকটিমের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফাইজুল করিম মবিন জানান, গৃহবধূর অভিযোগ দায়েরের পর ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় এনে আদালত বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।

কিশোরগঞ্জ জেলা মহিলা পরিষদের সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক ও টিচার্স ট্রেনিং কলেজের অধ্যক্ষ সুলতানা সাজিদা ইয়াসমিন বলেন, ঘটনাটি তাদের নজরে এসেছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।

ধর্ষকদের গ্রেফতার করে দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন কিশোরগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট ভূপেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিক দোলন।

এই বিভাগের আরও খবর